ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট ক্লোজার (হার্টের ফুটো বন্ধ করা)
ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট সাধারণভাবে হার্টের ফুটো নামে পরিচিত। এটি একটি সাধারণ জন্মগত রোগ, যা বহু শিশুর মধ্যেই দেখা যায়। এই ফুটো বা ছিদ্র সাধারণতঃ হার্টের প্রাচীর বা সেপ্টাম নামক অংশে দেখা যায়। এই সেপ্টাম বা প্রাচীর আমাদের হার্টের দুটি প্রকোষ্ঠকে (ভেন্ট্রিকল) পরস্পরের থেকে আলাদা করে। সুতরাং, এই প্রাচীরে ছিদ্র থাকলে রক্ত হার্টের বাম প্রকোষ্ঠ থেকে ডান প্রকোষ্ঠে চলে যায়, যার ফলে দূষিত রক্ত ও পরিশুদ্ধ রক্ত মিশ্রিত হয়ে যায়। হার্টের বাম প্রকোষ্ঠ বা নিলয়ের মূল কাজ হল রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু হার্টে ছিদ্র থাকলে রক্ত শরীরে পরিবাহিত হবার বদলে পুনরায় ফুসফুসে ফিরে যেতে পারে, যার ফলে হার্টের কাজ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। ফল স্বরূপ, হার্টকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় এবং তাতে হার্টের নানা রকম অসুখ দেখা দিতে পারে। এমনকি হার্ট ফেল পর্যন্ত্য হতে পারে।
বিপজ্জনক মনে হলেও সমস্ত রকম ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (সংক্ষেপে ভি এস ডি) প্রাণঘাতী বা গুরুতর হয়না। এবং সব ক্ষেত্রে সার্জারি বা অপারেশনের প্রয়োজনও পড়েনা। কিছু ক্ষেত্রে হার্টে হালকা কিছু ত্রুটি থাকলে তা অনেক সময় নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এইসব সামান্য ত্রুটির উপস্থিতি অনেক দিন অবধি জানাও যায় না। কিন্তু যদি কারো ক্ষেত্রে এই রোগের গুরুতর অথবা জটিল উপসর্গ দেখা যায়, তবে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ
এই রোগের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হলো:
- খাওয়া কমে যাওয়া
- শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট
- সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া
- ত্বক, বিশেষত ঠোঁট ও নখের চারিপাশ ফ্যাকাশে অথবা নীলাভ হয়ে যাওয়া
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- হার্টে অস্বাভাবিক শব্দ। সাধারণত চিকিৎসকেরা ছোট শিশুদের বুক পরীক্ষা করার সময় স্টেথোস্কোপের মাধ্যমেই এই আওয়াজ শুনতে পান। এবং এর থেকেই কোন শিশুর হার্টে ছিদ্র আছে নাকি যা জানা যেতে পারে।
বড়দের ক্ষেত্রে এই রোগের উপসর্গগুলি হলো:
- বেশি পরিশ্রমের কাজ করার সময় বা শুয়ে থাকার সময় শ্বাসকষ্ট এবং স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন ঘন শ্বাস পড়া
- দ্রুত ও অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
রোগের কারণ এবং ঝুঁকির সম্ভাবনা
- পালমোনারি হাইপারটেনশন
- জিনগত রোগ যেমন ডাউন সিনড্রোম
- ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন ভারী ধাতু বা পরিবেশের ক্ষতিকর উপাদানের সংস্পর্শে আসা
- ডায়াবিটিস ব মধুমেহ
- ওবেসিটি অর্থাৎ স্থূলতা
ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট নিরূপণ
যদি শিশুর বুকের শব্দ পরীক্ষা করতে গিয়ে চিকিৎসক কোনোরকম অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান, তবে তিনি নিম্নলিখিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন:
- ইকো কার্ডিওগ্রাম: ইকো কার্ডিওগ্রাম পরীক্ষায় শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে হার্টের ভিডিও তোলা সম্ভব। এই ভিডিও বা ছবি থেকে চিকিৎসকরা হার্টে কম রকম ছিদ্র আছে কিনা তা সহজেই দেখতে পারেন। এবং যদি ছিদ্র থাকে, তবে তার আকার, অবস্থান এবং জটিলতাও এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব। ইকো কার্ডিওগ্রাম পরীক্ষার দ্বারা হার্টে অন্যান্য কোনো রকম অজ্ঞাত জটিলতা আছে কিনা তাও জানা যায়।
ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি; গর্ভস্থ শিশুর হার্টের অবস্থা ও কার্যক্ষমতা জানার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
- ইলেক্ট্রো কার্ডিওগ্রাম: এই পরীক্ষা সাধারণ ভাবে ই সি জি নামে পরিচিত। ই সি জির দ্বারা হার্টের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ মাপা হয়। শরীরে ইলেক্ট্রোড নামক যন্ত্র লাগিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এর দ্বারা হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা এবং হার্টের অন্যান্য সমস্যা জানা যায়।
- বুকের এক্স রে: বুকের এক্স রে পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুস এবং হার্টের অবস্থা জানা যায়। হার্টের আকার বেড়ে যাওয়া (এনলার্জমেন্ট) বা বুকে জল জমা ইত্যাদি অসুবিধা জানার জন্য বুকের এক্স রে অত্যন্ত কার্যকরী।
- কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন: এই পদ্ধতিতে শরীরের নিম্নাংশ দিয়ে ক্যাথিটার নামক এক ধরণের সরু, নলাকার যন্ত্র বুকেত অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয়। এই নলে একটি ক্যামেরা লাগানো থাকে, যার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা সহজেই জন্মগত হার্টের অসুখ, বুকে জল জমা, হার্টের প্রকোষ্ঠগুলির কার্যক্ষমতা, হৃদস্পন্দন ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
- পালস অক্সিমেট্রি: আঙুলের মাথায় একটি ক্লিপের মতো যন্ত্র লাগিয়ে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ যথাযথ আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের চিকিৎসা
ওষুধপত্র
এই রোগের চিকিৎসায় নিম্নলিখিত কারণে ওষুধ দেওয়া হয়:
- রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় তরলের পরিমাণ হ্রাস করতে, যাতে হার্টে রক্তের পরিমাণ ও কম থাকে
- হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখার জন্য