ইমিউনোথেরাপি
ইমিউনোথেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসা করার একটি পদ্ধতি সেখানে চিকিৎসা পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো শরীরের সাধারণ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যবস্থাটিকে উদ্দীপিত করা এবং উন্নতি সাধন করা। এ.কে.এ হল আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যবস্থা যা ক্যানসারকে ঠিক করতে না পারলেও মেটাস্টেসিস (ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়া) – কে রোধ করতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরে নিরাময় হওয়ার জন্য প্রাকৃতিক শক্তি রয়েছে, ডাবলুবিসি (শ্বেত রক্ত কণিকাগুলি) এন্টিবডি গুলিকে এজন্য ধন্যবাদ যা আমাদের শরীরতন্ত্রে অপরিচিত পদার্থ গুলিকে শনাক্ত করে এবং তাদের সাথে লড়াই করে। এই ক্ষুদ্র অংশগুলি আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যবস্থার একটি অংশ এবং এগুলি রোগ ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করে সাহায্য করার জন্য গঠিত হয়েছে। ইমিউনোথেরাপি এই ধারণাটিকে প্রয়োগ করে যেখানে এটি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা টিকে চিহ্নিত করে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসাবে যা আমাদের শরীরের মধ্যে উপস্থিত অস্বাভাবিক কোষের কার্যপ্রণালীর সাথে লড়াই করে, তার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার সেল বা কোষের বৃদ্ধি কে প্রতিরোধ করার দিকেও নজর রাখে।
ইমিউনোথেরাপির উপকারিতাগুলি
ইমিউনোথেরাপির তিনটি প্রাথমিক সুবিধা রয়েছে
ক্যান্সার চিকিৎসায় এবং থেরাপির পদ্ধতিগুলির অন্যান্য বা বিকল্প চিকিৎসার সাথে সংযুক্ত হয়ে ইমিউনোথেরাপি হল একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যা আপনার শরীরকে তিনটি মূল উপায় এর সাহায্যে সহায়তা করতে পারে :
১. আক্রমণ করার তীব্র তাকে বাড়িয়ে দিতে ইমিউন সিস্টেম বা পদ্ধতিকে উদ্দীপিত করে।
২. শরীরকে অতিরিক্ত উপাদান গুলির সাথে আরো ভালোভাবে লড়াইয়ে সক্ষম করে তুলতে সহায়তা করে।
৩. ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতিকে প্রশিক্ষিত করে তোলে যার মাধ্যমে এটি চিহ্নিত অথবা পরীক্ষা করতে পারে নির্দিষ্ট কোষগুলিকে যেগুলি ক্যান্সার যুক্ত অথবা স্বভাবে অস্বাভাবিক প্রকৃতির।
ইমিউনোথেরাপির প্রকারগুলি
১. মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি
২. অনকোলিটিক ভাইরাস থেরাপি
৩. টি – সেল (কোষ) থেরাপি
৪. ক্যান্সার ভ্যাকসিন বা টিকাগুলি
ইমিউনোথেরাপি কোন ধরনের ক্যান্সারকে লক্ষ্যকেন্দ্র করে?
ইমিউনোথেরাপির প্রত্যেকটি প্রকার আপনার শরীরের নির্দিষ্ট অংশে, ক্যান্সারের উৎস কেন্দ্র টি কোথায় তার উপর নির্ভর করে লক্ষ্যবিন্দু স্থির করে। উদাহরণস্বরূপ, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি সাধারণত নিম্নলিখিত কারণের জন্য ব্যবহৃত হয় :
- মস্তিষ্ক অথবা ফুসফুসের ক্যান্সার
- স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার
- পেট/পাকস্থলী অথবা প্রোস্টেট (মূত্রথলি সংলগ্ন গ্রন্থি) ক্যান্সার
- হজকিনস্ (লসিকাতন্ত্র সম্বন্ধীয়) লিম্ফোমা অথবা নন্ হজকিনস্ লিম্ফোমা
টি – সেল থেরাপি সাধারণত নিম্নলিখিত কারণের জন্য ব্যবহৃত হয় :
- বি – সেল লিম্ফোমাস
- বিষম লিউকেমিয়া
ভ্যাকসিন থেরাপি প্রায়শই নিম্নলিখিত কারণের জন্য ব্যবহৃত হয় :
- এইচপিভি / HPV
- ভিন্ন ভিন্ন প্রোস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে
- হেপাটাইটিস বি
কেন ইমিউনোথেরাপি বেছে নেবেন?
এখন, ক্যান্সারের জন্য একাধিক (আরও পরিচিত) চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, তাই আপনারা অবশ্যই ভাবছেন; কেন ইমিউনোথেরাপি? এটা কার্যকর? এটি আপনার ক্যান্সার নিরাময় সম্ভাবনাকে উন্নত করবে? চলুন আপনার জন্য এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাক।
প্রথমত, ইমিউনোথেরাপি একটি সার্টিফাইড বা নিশ্চিত রূপে খ্যাত হওয়া একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে ইউএস বা ইউনাইটেড স্টেটস-এও স্বীকৃত। এই অনুমোদন গুলি বহু বছরের দক্ষ গবেষণা, বিকাশ এবং সাফল্যের দ্বারা সমর্থিত যার জন্য এটি অন্য যেকোন ক্যান্সার চিকিৎসার বিকল্প গুলির মত সম্পূর্ণ নিরাপদ পদ্ধতি।
যা বলা হয়েছে, ইমিউনোথেরাপি এখনো পর্যন্ত একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি নয় এবং অবস্থার তীব্রতা বা ব্যবহৃত ইমিউনোথেরাপির ধরনের ওপর নির্ভর করে রোগীর ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে এ পদ্ধতিটি প্রভাবিত করতে পারে বা নাও পারে। তবুও, এই থেরাপিটিপ্রকৃতপক্ষে অগণিত রোগীদের জীবন দীর্ঘায়িত করে তুলতে সহায়তা করেছে এবং আমরা যেমন বলেছি পদ্ধতিটি ক্রমাগত আরও বিকাশ লাভ করছে।
ইমিউনোথেরাপির সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি
ইমিউনোথেরাপির সুবিধাগুলি
১. যেহেতু এই থেরাপির লক্ষ্য হলো আপনার ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা তাই, ক্যান্সার থেকে আসা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি অথবা ক্যান্সারের বিকল্প থেরাপিগুলি থেকে কম তীব্রতর হবে।
২.একবার আপনার ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই থেরাপি থেকে স্থায়ীভাবে উন্নতি লাভ করলে ক্যান্সারজনিত পরিস্থিতি পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। প্রকৃতপক্ষে, ইমিউনোথেরাপি কার্যকর রূপে দেহে ক্যান্সার বৃদ্ধি দ্রুত হ্রাস করতে পারে যখন ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যান্য পদ্ধতিগুলি বিদ্যমান ক্যান্সার কোষ গুলিকে অপসারণ এর উপর জোর দেয়।
৩.অন্যান্য সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ হলেও ইমিউনোথেরাপি কার্যকর হতে পারে।
৪. যেহেতু ক্যান্সারের চিকিৎসা গুলিতে প্রায়শই অনেকগুলি চিকিৎসার মিশ্রণ থাকে,তাই ইমিউনোথেরাপি অন্যান্য চিকিৎসা সঙ্গে দারুণভাবে সমর্থন চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে এবং তাদের আরো ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করতে পারে।
ইমিউনোথেরাপির অসুবিধাগুলি
১.আমাদের প্রথম যে বিষয়টি মনে রাখা উচিত তা হল ইমিউনোথেরাপি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। এটি আপনার শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে বা নাও পারে।
২. অন্য যেকোনো ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতির মতো, ইমিউনোথেরাপিও এর নিজস্ব পার্শপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে যা জ্বর, সর্দি, অতিশয় ক্লান্তি, ব্যাখ্যাহীন ওজন বৃদ্ধির আকারে হতে পারে।
৩. ইমিউনোথেরাপি আপনার ত্বকে খারাপ প্রতিক্রিয়া ফেলে দিতে পারে। এটি লক্ষ্য করা গেছে যে ইমিউনোথেরাপি করা অঞ্চলটিতে প্রায়শই লালভাব, চুলকানি এবং অন্যান্য এলার্জির মত লক্ষণগুলি্ দেখতে পাওয়া যায়।
৪. ক্যান্সার যুক্ত টিউমার বা কোষগুলির পাশাপাশি, এই থেরাপি আপনার দেহের স্বাস্থ্যকর অঙ্গগুলিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
কেমো এবং রেডিয়েশন থেরাপি (রশ্মি বিকিরণ পদ্ধতি) তুলনামূলক ভাবে দ্রুত সম্পন্ন হলেও ইমিউনোথেরাপি হয় না। এই থেরাপি ধীরে ধীরে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সময় নেয়,যার অর্থ আপনি যদি দ্রুত সমাধানের সন্ধান করেন তবে এই থেরাপিটি আপনার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
ইমিউনোথেরাপির দ্রুত পয়েন্ট বা বিন্দুগুলি
- অতীত অথবা বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি, অতীত বা বর্তমানে চলা ওষুধ, জীবনযাত্রার পছন্দ যেমন অ্যালকোহল এবং তামাক, ধূমপান করা ইত্যাদির বিশদ বিবরণ সহ, এই পদ্ধতিটি করবার পূর্বে আপনার চিকিৎসকদের কাছে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসা সম্বন্ধীয় তথ্যের প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
- যেহেতু ইমিউনোথেরাপি একটি দীর্ঘকালীন চিকিৎসা পদ্ধতি, আপনি আপনার প্রতিদিনের জীবনে ফিরে আসার আগে আপনার বিশেষ রূপে সময় নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার প্রতিদিনের ব্যক্তিগত সহায়তার জন্য কাছাকাছি একজন যত্নসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
- ক্লান্তি, জ্বর এবং ঠান্ডা লাগার মত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি যদি থেরাপির পরে বাড়তে শুরু করে এবং এগুলি যদি চলে না যায় তবে অপেক্ষা করবেন না!অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করুন।
FAQs / অধিকতর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ইমিউনোথেরাপিসম্পর্কে আমরা প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।