ক্যান্সারের চিকিৎসা
শরীরে অস্বাভাবিক কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাওয়াই হলো ক্যান্সার। দেহের সাধারণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। যদি আমাদের শরীর স্বাভাবিক ভাবে কাজ না করে, তখন পরিণত কোষগুলি ধ্বংস না হয়ে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে শরীরে অসংখ্য অস্বাভাবিক কোষের সৃষ্টি হয়। এই অতিরিক্ত অস্বাভাবিক কোষগুলি একত্রিত হয়ে এক ধরণের পিন্ড তৈরি করে, যা সাধারণ ভাবে টিউমার নামে পরিচিত। এই টিউমার থেকেই সাধারণতঃ শরীরে ক্যান্সারের সূত্রপাত হয়।
আপাতদৃষ্টিতে বিপজ্জনক মনে হলেও, বর্তমানে ক্যান্সারের বিভিন্ন রকম উন্নত ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্ৰচলিত রয়েছে। তবে কোন রোগীর ক্ষেত্রে কী ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত সাধারণতঃ ক্যান্সারের অবস্থান, প্রকৃতি বা কোন ধরণের ক্যান্সার, এবং ক্যান্সারের বর্তমান অবস্থা অর্থাৎ ক্যান্সার কোন স্টেজে রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে। শরীরে ক্যান্সার কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে তার ওপর ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি নিরূপণ অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারনতঃ বেশিরভাগ ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যই চিকিৎসকেরা সার্জারি বা অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ক্যান্সার যদি প্রাথমিক অবস্থায় থাকে, অর্থাৎ বেশি দূর ছড়িয়ে না পড়ে থাকে, তবে সার্জারি সাধারনতঃ বিশেষ ভাবে কার্যকরী হয়। সার্জারি ছাড়াও কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি ইত্যাদিও ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়। বর্তমানে অনেক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্থাৎ অঙ্কোলজিস্টরা নানা রকম অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন হরমোন থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি ইত্যাদির সুপারিশ করে থাকেন। এছাড়াও বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনকে কিছু কিছু ক্যান্সারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
কিভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করবো?
যদি আপনার চিকিৎসক মনে করেন যে আপনার শরীরে ক্যানসার দেখা দিয়েছে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে আপনি ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়াও, সঠিক ও সুনিশ্চিত ভাবে ক্যান্সারের অবস্থান, প্রকৃতি ও অবস্থা জানার জন্য আপনাকে আরও কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। এইসব পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে ক্যান্সার কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে তাও স্পষ্ট ভাবে জানা যায়। এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- রক্ত পরীক্ষা
- ইমেজিং টেস্ট যেমন আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, এম আর আই (MRI) ইত্যাদি
- ক্যান্সার টিস্যুর বায়োপসি
- পি ই টি স্ক্যান
এইসব পরীক্ষার রিপোর্ট বা ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আপনার সংশ্লিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
ক্যান্সারের কী কী ধরণের চিকিৎসা হয়?
সার্জারি
কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি হল মূলতঃ একটি ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ বা চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা শরীরের অভ্যন্তরে অতি দ্রুতহারে বাড়তে থাকা ক্যান্সার সেল বা কোষগুলির বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে এবং তাদের নির্মূল করে। এই ওষুধ সাধারণতঃ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলা ক্যান্সার সেল বা কোষগুলিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
যদিও কেমোথেরাপির বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি রেডিয়েশন বা ক্যান্সারের অপারেশনের চাইতে আলাদা। কারণ, রেডিয়েশন থেরাপি বা অপারেশন ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলিকে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করে। অন্যদিকে, কেমোথেরাপির ওষুধ মেটাস্টেসিস পর্যায়ে থাকা অর্থাৎ দেহের অন্যান্য অংশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধংস করতে সক্ষম। (আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: কেমোথেরাপি)
রেডিয়েশন থেরাপি
ক্যান্সারের অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি
ইমিউনোথেরাপি
সুনির্দিষ্ট ঔষধ প্রয়োগ বা টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি
হরমোন থেরাপি
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট প্ৰক্রিয়াটি স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট নামেও পরিচিত। এই পদ্ধতিতে দেহের ক্ষতিগ্রস্ত বা রোগাক্রান্ত অস্থিমজ্জাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অস্থিমজ্জা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়।
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হল মাল্টিপল মায়ালোমা রোগের সর্বাধিক কার্যকরী এবং উৎকৃষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা। (আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট