কোলোরেক্টাল ক্যান্সার কি?
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হল মলাশয় এবং মলদ্বারের ক্যান্সার।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার তখন উৎপন্ন হয় যখন মলাশয় এবং মলদ্বারের আস্তরণ যুক্ত কোষ গুলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এই কোষগুলি টিউমার তৈরি করে, যা ক্যানসার(মেটাস্ট্যাটিক টিউমার) নামে পরিচিত।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের উপসর্গ গুলি কি হয়ে থাকে?
প্রাথমিক পর্যায়ে কোলোরেকটাল ক্যানসার সাধারণত কোন ধরনের উপসর্গ গুলি দেখায় না।
কলোরেক্টাল ক্যান্সার এর সাধারণ উপসর্গ গুলি হল:
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
- রেকটাল রক্তপাত বা ক্র্যাম্পিং
- মলে বা মলে রক্তের ঘন কালো দাগ
- পেটে অস্বস্তি বা ফোলাভাব
- ক্লান্তি এবং ক্ষুধা হ্রাস
- পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা
কলোরেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকিগুলি এবং কারণসমূহ
- বয়স : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোলোরেকটাল ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
- লিঙ্গ : পুরুষদের মধ্যে কলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অত্যাধিক থাকে।
- পলিপস : কি ধরনের বৃদ্ধিগুলিমলাশয় বা মলদ্বারের ভেতরে প্রাচীরের উপর উপস্থিত থাকে যা ক্যানসার পূর্ববর্তী লক্ষণ হয়। অ্যাডেনোমা হলো এক ধরনের পলিপ, যা সাধারনত কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এর কারন হয়।
- ব্যক্তিগত ইতিহাস : যদি একজন রোগীর আগের থেকেই কোলোরেক্টাল ক্যানসার থাকে, তাহলে ৬০ বছরের পূর্বে পুনরায় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- পরিবার : কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের যদি কোন পারিবারিক ইতিহাস থেকে থাকে।
- খাদ্যবিধি বা ডায়েট : নির্দিষ্ট ধরনের ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল এবং অল্প পরিমাণ ফাইবার থাকে ফলে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- জীবনশৈলী : ধূমপান করা, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং অতিরিক্ত ওজন কোলোরেক্টাল ক্যানসার ঘটাতে পারে।
- ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস যুক্ত ব্যক্তিদেরকলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকে।
কলোরেক্টাল ক্যান্সার এর ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়
- সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (CBC): এই ধরনের পরীক্ষা রক্তে বিভিন্ন ধরনের কোষ পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
- লিভার এনজাইম: লিভার কতটা ভালো কাজ করছে তা পরীক্ষা করার জন্য এই রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
- টিউমার চিহ্নিতকারী: টিউমার মার্কার, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার কোষ দ্বারা তৈরি পদার্থের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
- ক্যান্সার কোষে উচ্চ মাত্রার জিন মিউটেশন, মাইক্রোস্যাটেলাইট অস্থিরতা (MSI), এবং ক্যান্সার কোষে অমিল মেরামতে (MMR) কোনো পরিবর্তন আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য MSI এবং MMR পরীক্ষা করা হয়।
- সিটি স্ক্যান
- পেটের আল্ট্রাসাউন্ড
- এন্ডোরেক্টাল এমআরআই
- পিইটি সিটি স্ক্যান
- ডায়াগনস্টিক কোলোনোস্কোপি: কোলনোস্কোপি মলদ্বারের মধ্য দিয়ে ঢোকানো প্রান্তে একটি ছোট ভিডিও ক্যামেরা সহ একটি পাতলা, অনমনীয়, হালকা টিউব ব্যবহার করে পুরো কোলন এবং মলদ্বার পরীক্ষা করে।
- বায়োপসি: টিস্যু বা টিস্যুর একটি ছোট টুকরো সাধারণত কোলন থেকে সরানো হয় এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য পরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসা
নিম্নলিখিত কলোরেক্টাল ক্যান্সার এর সাধারণ চিকিৎসার বিকল্প গুলি
সার্জারি বা অস্ত্রোপচার
কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি হলো ক্যান্সার বিরুদ্ধ ড্রাগ বা ওষুধের ব্যবহার,যার মাধ্যমে খুবই দ্রুত বিভাজিত হওয়া কোষগুলি যা ক্যান্সারের কারণ হয় তার বৃদ্ধি কে ধীর গতিতে অথবা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও, কেমোথেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে এখনো সর্বাধিক রূপে ব্যবহার করা হয়। রেডিয়েশন (তেজস্ক্রিয়) এবং সার্জারি থেকে ভিন্ন যা কেবল নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকা ক্যান্সার কোষ গুলি গিরি চিকিৎসা করে সেখানে কেমোথেরাপির ড্রাগস বা ওষুধগুলি শরীরের ভিন্ন ভিন্ন অংশে মেটাস্টেটেড(ছড়িয়ে পড়া) ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে পারে।
রেডিয়েশন থেরাপি
টার্গেটেড(নির্দিষ্ট) ড্রাগ থেরাপি
টার্গেটের থেরাপি হলো এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসা যা ড্রাগ বা ক্যান্সারের ওষুধ গুলির ব্যবহার করে। যাই হোক এটি প্রচলিত কেমোথেরাপি থেকে ভিন্ন হয়, চা ড্রাগ বা ওষুধগুলি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলে।
টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমে, ক্যান্সারের নির্দিষ্ট জিনগুলি, প্রোটিন গুলি, টিস্যু বা তন্তু গুলির বহিরঅংশ যাও ক্যান্সারের বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকতে সাহায্য করে তাকে টার্গেট বা মূল লক্ষ্য করা হয়। টার্গেটেড থেরাপি সাধারণত কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে করা হয়ে থাকে।