সার্ভিকাল ক্যান্সার (জরায়ুমুখের ক্যান্সার)
এই ক্যান্সার তখন ঘটে থাকে যখন সেল বা কোষগুলি অস্বাভাবিক রূপে বৃদ্ধি পায় এবং এটি পার্শ্ববর্তী অংশে থাকা টিস্যু বা কোষগুলোতেও আক্রমণ করে ও শরীরের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলির মধ্যে অবশেষে এটি ছড়িয়ে পড়ে রক্তপ্রবাহের মারফত অথবা লিম্ফ নোড (দেহ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত বর্ণহীন ক্ষারধর্মী রস) এর মাধ্যমে।
সার্ভিকাল ক্যান্সার হল জরায়ুর বা জরায়ুমুখের ক্যানসার। এটি জরায়ুর সবথেকে নিচের অংশ এবং ইহা জরায়ু সঙ্গে যোনির সংযোগ ঘটায়। সার্ভিকাল ক্যান্সার খুবই আক্রমণাত্মক হয়, এটি জরায়ুর গভীরতর টিস্যু গুলিকে বা তন্তুগুলিকে প্রভাবিত করে এবং এটি ফুসফুস, যকৃৎ, মালদ্বার/পায়ু এবং যোনিগুলির মত শরীরের অন্যান্য অংশে প্রভাব ফেলতে পারে।
সার্ভিকাল ক্যান্সারের কারণসমূহ
- হিউম্যান (মানুষের দ্বারা) প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি/HPV) দ্বারা সংক্রমণ।
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
- ধূমপান করা
- অল্প বয়সে যৌন সম্বন্ধ স্থাপন এইচপিভি/HPV-র ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে
- পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে গর্ভনিরোধক গুলি সেবন করার ফলে
সার্ভিকাল ক্যান্সারের লক্ষণগুলি এবং উপসর্গগুলি
- অস্বাভাবিক রূপে রক্তক্ষরণ যেমন মেনোপজ (রজ্ঃবন্ধ) হওয়ার পরেও রক্তক্ষরণ, নিয়মিত ঋতুচক্রের মধ্যেও রক্তক্ষরণ হওয়া।
- পেলভিস (শ্রোণী)-এ যন্ত্রণা
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- প্রস্রাবের সময় যন্ত্রণা হওয়া
- ভারি অথবা অস্বাভাবিক স্রাবের নির্গত হওয়া যা জলীয়, ঘন এবং সম্ভবত কটু গন্ধ যুক্ত হতে পারে।
সার্ভিকাল ক্যান্সারের বিভিন্ন পর্যায়গুলি
- প্রথম পর্যায়: ক্যান্সার কেবল জরায়ুতে অবস্থান করে।
- দ্বিতীয় পর্যায়: ক্যান্সার জরায়ুতে অবস্থান করার সাথে সাথে যোনির নিম্নাংশের মধ্যেও উপস্থিত থাকে।
- তৃতীয় পর্যায়: ক্যান্সার জরায়ুতে থাক আর সঙ্গে সঙ্গে যোনির উপরাংশ এবং নিম্নাংশে দেখা যায়
- চতুর্থ পর্যায়:ক্যান্সার নিকটবর্তী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোকে ছড়িয়ে পড়ে যেমন মূত্রথলি ও মলদ্বারে এবং এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেগুলি হতে পারে ফুসফুস, লিভার অথবা হাড়ের মধ্যে।
সার্ভিকাল ক্যান্সারের রোগ নির্ণয়/ডায়াগনোসিস
- প্যাপ টেস্ট (পরীক্ষা): জরায়ু অংশের কোষগুলিকে মৃদুভাবে ঝেড়ে নেওয়া এবং পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা।
- এইচপিভি/HPV ডিএনএ/DNA টেস্ট: এই পরীক্ষার মধ্যে জুলাইয়ের অংশ থেকে কোষগুলিকে সংগ্রহ করা হয় এবং কোষগুলিতে কোন প্রকার এইচপিভি জাতীয় ভাইরাস দ্বারা কোনো সংক্রমণ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।
- এন্ডোসার্ভিকাল কারেটেজ: এই পদ্ধতিতে একটি ক্ষুদ্র, চামচের ন্যায় একটি যন্ত্রাংশ যা কূরেট নামক যন্ত্র হিসেবে পরিচিত, এর সাহায্যে জরায়ু থেকে স্ক্র্যাপিং বা চাঁছুনির মাধ্যমে টিস্যু বা তন্তুগুলির নমুনা সংগ্রহ করা থাকে।
- ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যার লুপ: এই পরীক্ষা গুলি সাধারণত স্থানীয় জায়গায় অ্যানাস্থেসিয়া(অসাঢ় করা) প্রয়োগের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। একটি ক্ষুদ্র টিস্যু বা তন্তু পাওয়া যায় একটি পাতলা, নিম্ন ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে।
- কন্ বায়োপসি: এই পরীক্ষাটি স্থানীয় জায়গায় অ্যানাস্থেসিয়া(অসাঢ় করা) প্রায়োগ দ্বারা করা হয়, যার মাধ্যমে জরায়ুর কোষগুলির অন্তর্বর্তীস্তর গুলি পাওয়া যায় পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য।
সার্ভিকাল ক্যান্সারের চিকিৎসা
হিস্টেরেকটমি
হিস্টেরেকটমি হল জরায়ুর অপসারণ করা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। হিস্টেরেকটমি হতে পারে:
সাধারণ হিস্টেরেকটমি: ক্যান্সার অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার দ্বারা জরায়ু এবং গর্ভাশয়ের অপসারণ, অথবা
রেডিক্যাল হিস্টেরেকটমি: আক্রান্ত বা সংক্রমিত অংশটিতে জরায়ু, গর্ভাশয়, যোনি অংশ এবং লিম্ফ নোড (দেহ গ্রন্থি থেকে নির্গত বর্ণহীন ক্ষারধর্মী রস) এর অস্ত্রোপচার দ্বারা অপসারণ।
কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি হলো ক্যান্সার বিরুদ্ধ ড্রাগ বা ওষুধের ব্যবহার,যার মাধ্যমে খুবই দ্রুত বিভাজিত হওয়া কোষগুলি যা ক্যান্সারের কারণ হয় তার বৃদ্ধি কে ধীর গতিতে অথবা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও, কেমোথেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে এখনো সর্বাধিক রূপে ব্যবহার করা হয়। রেডিয়েশন (তেজস্ক্রিয়) এবং সার্জারি থেকে ভিন্ন যা কেবল নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকা ক্যান্সার কোষ গুলি গিরি চিকিৎসা করে সেখানে কেমোথেরাপির ড্রাগস বা ওষুধগুলি শরীরের ভিন্ন ভিন্ন অংশে মেটাস্টেটেড(ছড়িয়ে পড়া) ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে পারে।
রেডিয়েশন থেরাপি
টার্গেটেড(নির্দিষ্ট) ড্রাগ থেরাপি
ইমিউনোথেরাপি
সচরাচর জিজ্ঞাস্য
সার্ভিকাল ক্যান্সার হতে বেঁচে থাকার আর কতখানি?
- সার্ভিকাল ক্যান্সার থেকে বেঁচে থাকার হার প্রায় ৯২ শতাংশ, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়।
সার্ভিকাল ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে কত সময় নেয়?
- ক্ষতিকর সার্ভিকাল ক্যান্সার বিকাশের পূর্বে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় নেয়।
সার্ভিকাল ক্যান্সার কিভাবে শনাক্ত হয়?
- জরায়ুর ক্যান্সার যুক্ত কোষগুলির সনাক্তকরণ প্যাপ টেস্ট বা পরীক্ষা করতে পারে।
সার্ভিকাল ক্যান্সার হওয়ার সর্বাপেক্ষা সাধারন বয়স কত?
- ৩৫ এবং ৪৪ বছর মহিলাদের মধ্যে ঘনঘন এর ডায়াগনোসিস পরীক্ষা করা উচিৎ।