হার্ট ফেলিওর (হৃৎপিন্ডের বিকলতা)
হার্ট ফেলিওর বা হৃৎপিন্ডের বিকলতা হলো এমন একটি অবস্থা যখন হৃৎপিন্ডের মাংসপেশীগুলি শরীরের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে অসমর্থ হয়। এই অবস্থা সাধারণত ঘটে থাকে যখন হৃৎপিণ্ড খুব দুর্বল বা শক্ত/স্পন্দনহীন হয়ে যায়। এই অবস্থাটিকে কনজেসটিভ হার্ট ফেইলিওর ও বলা হয়ে থাকে।
হার্ট ফেইলিওর এর কারণগুলি
- করোনারি আর্টারি ডিজিজ – এই অবস্থায় আর্টারি বা ধমনী গুলির মধ্যে প্লাক (পাতলা,সমতল,ধাতব প্লেটের মত বস্তু) স্তুপাকৃতি রূপে জমা হয় যা রক্ত প্রবাহ হ্রাস করে এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
- হাইপারটেনশন (হাই ব্লাড প্রেসার /উচ্চ রক্তচাপ) – কার্যকর রূপে রক্ত পাম্প করার ক্ষেত্রে এটি হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি গুলিকে অত্যাধিক শক্ত/কঠিন অথবা খুবই দুর্বল করে তোলে।
- ড্যামেজ (ক্ষতি করা) অথবা ডিজিজ হার্ট ভালবস্ (রোগগ্রস্ত হৃৎপিন্ডের কপাটিকা গুলি) – একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভালব বা কপাটিকা হৃৎপিণ্ডকে কঠিন ভাবে কাজ করতে জোর করে, হৃৎপিণ্ডকে দুর্বল করার দিকে পরিচালিত করে।
- কার্ডিওমায়োপ্যাথি- হৃৎপিন্ডের মাংসপেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- মায়োকার্ডাইটিস (হৃৎপিন্ডের মাংসপেশির ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ)- এটি বামদিকের হার্ট ফেলিওর বা বিকলতার কারণ হতে পারে।
- কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্ট – জন্মগত হৃৎপিন্ডের বিচ্যুতি গুলি।
- এইচআইভি / HIV
- অ্যালকোহল এবং ড্রাগ এর ব্যবহার
- ওবেসিটি বা মেদবৃদ্ধি
হার্ট ফেইলিওর এর লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি
- শ্বাসকষ্ট (ডিস্পনিয়া)
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা এবং পেটে ফোলা ভাব
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
- ক্রমাগত কাশি অথবা শব্দ করে শ্বাস নেওয়া
- রাতে প্রস্রাব করার প্রয়োজন বেড়ে যাওয়া
- তরল ধারণ ক্ষমতা
- ক্ষিদে না হওয়া এবং গা – গোলানোভাব
- মনোযোগ দিতে অসুবিধা
- হঠাৎ গুরুতর শ্বাসকষ্ট হওয়া
- বুকে ব্যথা
হার্ট ফেলিওর এর ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়
- ব্লাড টেস্ট /রক্ত পরীক্ষা- কোন রোগের লক্ষণ আছে কিনা যা হৃৎপিন্ডে ক্ষতি করতে পারে তার জন্য এটি করা হয়।
- বুকের এক্স-রে – এটি ডাক্তারকে ফুসফুস এবং হৃৎপিন্ডের পরিস্থিতি দেখতে সাহায্য করে।
- ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি / ECG) – এই পরীক্ষাটি হৃদপিন্ডের বৈদ্যুতিক ক্রিয়া-কলাপ নথিভূক্ত করে ইলেকট্রোড এর মাধ্যমে যা চামড়ার মধ্যে রাখা থাকে।
এই পদ্ধতিতে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের একটি ভিডিও ইমেজ বা ছবির গঠন করা হয়।
- সিটি স্ক্যান
- এমআরআই / MRI
- করোনারি অ্যানজিওগ্রাম
- মায়োকার্ডিয়াল বায়োপসি – একটি ক্ষুদ্র, নমনীয় বায়োপসি কর্ড গলা অথবা গ্ৰয়েন (কটিসন্ধি/কটি’র সংযোগস্থল/কুঁচকি) একটি শিরায় প্রবেশ করানো হয় হৃৎপিন্ডের মাংসপেশির ছোট ছোট টুকরো গুলিকে সংগ্রহ করার জন্য।
হার্ট ফেইলিওর এর প্রকারগুলি
- হার্ট ফেলিওর (বাম – দিকের) – এটি ফুসফুসের মধ্যে স্তুপাকৃতি ভাবে তরল পদার্থ জমা হওয়ার সাথে যুক্ত যা শ্বাসকষ্টের দিকে পরিচালিত করে।
- হার্ট ফেলিওর (ডান – দিকের) – পেট, পা এবং পায়ের পাতায় তরল পদার্থ জমা করার সাথে যুক্ত যা ফোলাভাবের দিকে পরিচালনা করে।
- সিস্টোলিক হার্ট ফেলিওর – এই অবস্থায় বাম নিলয় বা ভেন্ট্রিকল সংকোচন-প্রসারণ করতে পারে না যা পাম্পিং সমস্যার দিকে পরিচালিত করে।
- ডায়াস্টোলিক হার্ট ফেলিওর – এই ক্ষেত্রে বাম নিলয় বা ভেন্ট্রিকল আরাম করতে অথবা সম্পূর্ণ ভর্তি হতে পারে না যা ফিলিং বা ভর্তি হওয়ার সমস্যা সৃষ্টি করে।
FAQs / অধিকতর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. হার্ট ফেলিওর কি প্রাণনাশক/মারাত্মক হতে পারে?
চিকিৎসা যদি না করা হয় তবে হার্ট ফেলিওর মারাত্মক হতে পারে। হার্ট ফেলিওর একটি গুরুতর মেডিকেল অবস্থা তার জন্য চিকিৎসা একান্তই প্রয়োজনীয়।
২. হার্ট ফেলিওর উপসর্গগুলি কে কি কমানো যেতে পারে?
সঠিকভাবে হার্ট ফেলিওর এর পরিচর্যা করলে এর উপসর্গ গুলি কে কমিয়ে ফেলা যেতে পারে এবং এই অবস্থার অগ্রগতি কে হ্রাস করা যেতে পারে।
৩. ওজন হ্রাস করলে কি হার্ট ফেলিওর এর ঝুঁকি কমিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে?
বাড়তে থাকা হৃৎপিন্ডের রোগ এর ঝুঁকি শরীরের ওজন কেবলমাত্র ৫ থেকে ১০ % কমিয়ে ফেলতে পারে।