মূত্রাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ভারতের সেরা চিকিৎসকগণ
মূত্রাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ভারতের সেরা হাসপাতালগুলো
ব্লাডার ক্যান্সার কাকে বলে?
শরীরের কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে এবং অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেলে ক্যান্সার হতে পারে। এই অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া কোষগুলি লিম্ফ বা লসিকা এবং রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে আশেপাশের সুস্থ কোষ গুলিতেও প্রভাব বিস্তার করে এবং এইভাবে ক্যান্সার ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্লাডার ক্যান্সার বা মূত্রশয়ের ক্যান্সার হলো এমন একটি রোগ যাতে মূত্রশয়ের কোষগুলি উপরিউক্ত পদ্ধতিতে অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত হারে বাড়তে থাকে এবং ক্রমশঃ তা টিউমারে পরিণত হয়। এই টিউমার থেকেই প্রাথমিক ভাবে ক্যান্সারের সূচনা হয়। ব্লাডার বা মূত্রাশয় হলো আমাদের শরীরের নিম্নাংশে শ্রোণী বা পেলভিক অঞ্চলে অবস্থিত একটি ফাঁপা অঙ্গ যা আমাদের রেচনকার্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই ব্লাডার বা মূত্রশয়ে সাধারণতঃ মূত্র জমা হয় এবং এর পেশীগুলি আমাদের মূত্রত্যাগের পরিমাণ ও প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্লাডার ক্যান্সারের কারণ
- ব্লাডারের প্রদাহ
- পরিবারে কারোর ব্লাডার ক্যান্সার থাকলে এর সম্ভাবনা বাড়ে
- অত্যধিক ধূমপান
- ক্ষতিকর রাসায়নিক বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থের সংস্পর্শে আসা। বিশেষতঃ কাজের জায়গায় নিয়মিত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা
- নির্দিষ্ট কিছু মধুমেহ অর্থাৎ ডায়াবেটিসের ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করার ফলেও ব্লাডার ক্যান্সার হতে পারে।
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্লাডার ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ব্লাডার ক্যান্সারের প্রকারভেদ
- ইউরোথিলিয়াল কারসিনোমা: মূত্রশয়ের অভ্যন্তরে থাকা কোষপ্রাচীর বা কোষের গায়ে যদি ক্যান্সার দেখা দেয়, তাকে ইউরোথিলিয়াল কারসিনোমা বলা হয়।
- স্কোয়ামাশ সেল কারসিনোমা: যদি মূত্রাশয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ এবং জ্বালা থাকে, সেক্ষেত্রে স্কোয়ামাশ সেল কারসিনোমা হতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে ক্যাথিটার ব্যবহার করার ফলে এই জাতীয় ক্যান্সার হতে পারে।
- অ্যাডেনোকারসিনোমা: মূত্রাশয়ের শ্লেষ্মা উৎপাদনকারী গ্রন্থিগুলিতে সাধারণতঃ অ্যাডেনোকারসিনোমা দেখা দেয়।
ব্লাডার ক্যান্সারের উপসর্গ ও লক্ষণ
- হিমাচুরিয়া অর্থাৎ প্রস্রাবের সাহে রক্তপাত হওয়া
- বার বার প্রস্রাব হওয়া
- মূত্র ত্যাগের সময় জ্বালা ভাব এবং যন্ত্রনা অনুভূত হওয়া
- তলপেট ও কোমরের নীচের অংশে ব্যথা
- ওজন কমে যাওয়া
- পায়ের পাতা ফুলে ওঠা
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
ব্লাডার ক্যান্সারে রোগ নিরূপণ
ব্লাডার ক্যান্সার হয়েছে কিনা জানার জন্য চিকিৎসকেরা সাধারণতঃ যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সেগুলি হলো:
- ডিজিটাল রেক্টাল পরীক্ষা: এই পরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসকেরা হাতে দস্তানা অর্থাৎ গ্লাভস পরে রেক্টাম বা পায়ুর মধ্য দিয়ে আঙুল প্রবেশ করান, এবং এইভাবে পায়ুপথে কোনো টিউমার আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখেন।
- ইউরিনালিসিস: এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে রক্ত ও অন্যান্য কোনো পদার্থ নির্গত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষন করে দেখা হয়।
- ইউরিন টিউমার মার্কার: শরীরে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ থেকে কোনো পদার্থ নিঃসৃত হচ্ছে কিনা, তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়। এই পদ্ধতিতে মূত্রাশয়ে একটি ভিডিও ক্যামেরা যুক্ত সরু নলাকার যন্ত্র প্রবেশ করানো হয়। এরপর, ইনজেকশনের দ্বারা লবণ জল মূত্রাশয়ে প্রবেশ করানো হয়। যন্ত্রে অবস্থিত ভিডিও ক্যামেরার দ্বারা পরীক্ষাকারী চিকিৎসক মূত্রাশয়ের অভ্যন্তরের অবস্থা পরিষ্কার ভাবে দেখতে পান। এর ফলে সহজেই রোগ নিরূপণ করা সম্ভব হয়।
- ইউরিন কালচার: এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রাশয়ে কোনো রোগজীবাণু সংক্রমণ হয়েছে কিনা জানা যায়।
- ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশান অফ ব্লাডার টিউমার (TURBT) বা অপারেশনের মাধ্যমে মূত্রাশয়ের টিউমার বাদ দেওয়া: এই অপারেশনের দ্বারা চিকিৎসক মূত্রাশয়ে অবস্থিত টিউমার এবং তার আশেপাশের কিছু পেশী ও কোষ কেটে বার করেন। এরপর ওই টিউমার ও পেশির নমুনা সংগ্ৰহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এবং এই পরীক্ষা থেকে টিউমারটি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা জানা যায়।
- ইন্ট্রাভেনাস পাইলোগ্রাম (IVP): এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক ইনজেকশনের মাধ্যমে ডাই বা একপ্রকার রঙ শরীরে প্রবেশ করান। এই রঙ শিরার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মূত্রাশয় এবং মূত্রনালীতে থাকা টিউমার এবং অন্যান্য ক্যান্সার আক্রান্ত অংশগুলিকে চিহ্নিত করে।
- রেট্রোগ্রেড পাইলোগ্রাম: এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ক্যাথিটার (একধরনের সরু, নলাকার উপকরণ) মূত্রনালী ও মূত্রাশয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করান। এরপর ওই নলাকার উপকরণ দ্বারা ডাই বা রঙ প্রবেশ করালে মূত্রাশয়ের প্রাচীর স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। যদি মূত্রাশয়ে কোনো টিউমার থাকে, তা এই পদ্ধতিতে নিখুঁত ভাবে বোঝা যায়।
- সিটি স্ক্যান
- এম আর আই
- আল্ট্রাসাউন্ড
- বোন বা হাড়ের স্ক্যান
ব্লাডার ক্যান্সারের ধাপ গুলি কী কী?
- স্টেজ 0: ক্যান্সার যখন শুধুমাত্র মূত্রাশয়ের কেন্দ্রে অবস্থান করে
- স্টেজ ১: ক্যান্সার যখন মূত্রাশয় বা ব্লাডারের গায়ে ছড়িয়ে যায়
- স্টেজ ২: ক্যান্সার যখন ব্লাডারের আসে পাশের সংযোগকারী টিস্যু এবং পেশির স্তরে ছড়িয়ে পড়ে
- স্টেজ ৩: এই অবস্থায় ক্যান্সার ব্লাডারের চারিপাশে অবস্থিত ফ্যাটি টিস্যু তে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও এই ধাপে ক্যান্সার ব্লাডারের পার্শবর্তী অন্যান্য অঙ্গ যেমন প্রস্টেট (ছেলেদের ক্ষেত্রে), জরায়ু ও যোনি (মেয়েদের ক্ষেত্রে) ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- স্টেজ ৪: এই অবস্থায় ক্যান্সার শ্রোণী ও পেটের প্রাচীর অব্দি ছড়িয়ে পড়ে। লসিকাগ্রন্থি এবং অন্যান্য পেশীগুলিও আক্রান্ত হ্য়। এছাড়াও এই অবস্থায় ক্যান্সার শরীরের কিছু দূরবর্তী অংশ যেমন হাড়, লিভার এবং ফুসফুসেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
ব্লাডার ক্যান্সারের চিকিৎসা
সার্জারি
ব্লাডার ক্যান্সার সারিয়ে তুলতে যেসব সার্জারি অর্থাৎ অপারেশন করা যায়, সেগুলি হল:
- ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশান অফ ব্লাডার টিউমার (TURBT): এই পদ্ধতিতে রেট্রোস্কোপ নামক সরু, নলাকার যন্ত্র মূত্রনালীর মাধ্যমে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করানো হয়। রেট্রোস্কোপ যন্ত্রটি আসলে একটি নলের মতন যার একদিকে একটি তার দিয়ে তৈরি ছিদ্র বা গোলাকার অংশ রয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে প্রস্রাব নির্গত হতে পারে। এই যন্ত্রের দ্বারা চিকিৎসক আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে অস্বাভাবিক কোষ এবং টিউমার কেটে বাদ দিতে পারেন।
- সিসেক্টমি: এই সার্জারি বা অপারেশনের মাধ্যমে ব্লাডারের একটি অংশ বা সম্পূর্ন ব্লাডারটিই কেটে বাদ দেওয়া হতে পারে। ব্লাডারের একটি অংশ অপারেশন করলে তাকে পার্শিয়াল বা আংশিক সিসেক্টমি বলে, এবং সম্পূর্ন ব্লাডার বাদ দিলে তাকে র্যাডিকাল সিসেক্টমি বলা হয়।
কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি হল মূলতঃ একটি ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ বা চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা শরীরের অভ্যন্তরে অতি দ্রুতহারে বাড়তে থাকা ক্যান্সার সেল বা কোষগুলির বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে এবং তাদের নির্মূল করে। এই ওষুধ সাধারণতঃ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলা ক্যান্সার সেল বা কোষগুলিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
যদিও কেমোথেরাপির বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি রেডিয়েশন বা ক্যান্সারের অপারেশনের চাইতে আলাদা। কারণ, রেডিয়েশন থেরাপি বা অপারেশন ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলিকে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করে। অন্যদিকে, কেমোথেরাপির ওষুধ মেটাস্টেসিস পর্যায়ে থাকা অর্থাৎ দেহের অন্যান্য অংশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধংস করতে সক্ষম। (আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: কেমোথেরাপি)