ল্যামিনেক্টমি
ল্যামিনেক্টমির নির্দেশক লক্ষণগুলি
যদি চিকিৎসক আপনার শরীরে স্পাইনাল স্টেনোসিস নামক রোগের উপসর্গ দেখতে পান, তবে তিনি ল্যামিনেক্টমি করার পরামর্শ দিতে পারেন। স্পাইনাল স্টেনোসিস এমন একটি রোগ যাতে মেরুদণ্ডের অংশ (কশেরু) গুলি সঙ্কুচিত হয়ে আসে, এবং ফলস্বরূপ মেরুদণ্ডে প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। এই অবস্থা মূলতঃ যে কারণে শেখ ডিটেবপারে সেগুলি হল:
- মেরুদণ্ডে আঘাত লাগা
- জন্মগত রোগ
- বাতের সমস্যা (প্রধানতঃ বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে)
- বয়সজনিত কারনে যখন মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হতে শুরু করে
- স্লিপ ডিস্ক
- মেরুদণ্ডের টিউমার
উল্লেখ্য যে কেবলমাত্র যখন রোগের উপসর্গগুলি রোগীর স্বাভাবিক জীবনে অন্তরায় হয়ে ওঠে, এবং অন্যান্য কাঁটাছেঁড়া ব্যতীত চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন ওষুধ বা ব্যায়াম ইত্যাদি আর কাজ করেনা, তখনই চিকিৎসক ল্যামিনেক্টমি করার পরামর্শ দেন।
ল্যামিনেক্টমির প্রকারভেদ
ডিকম্প্রেসিভ ল্যামিনেক্টমি প্রধানতঃ দুপ্রকারের। এগুলি হল:
- লাম্বার ল্যামিনেক্টমি
- সারভাইকাল ল্যামিনেক্টমি
ল্যামিনেক্টমি সার্জারির প্রস্তুতি
এই সার্জারির জন্য নিম্নলিখিত চারটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এছাড়াও আপনার চিকিৎসক প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কিছু অতিরিক্ত ব্যবস্থা অনুসরণ করার পরামর্শ দিতে পারেন।
- এই সার্জারির প্রাথমিক শর্ত হল চিকিৎসককে আপনার সমস্ত পূর্বতন রোগ ও শারীরিক অবস্থার খোলাখুলি বিবরণ দেওয়া। আপনি কী কী ওষুধ নিয়মিত খান বা আগে খেতেন, অতীতে অন্য কোনো রোগের চিকিৎসা হয়েছে কিনা এই সব তথ্যই চিকিৎসকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
- ধূমপান এবং রক্ত তরল করে এজাতীয় বস্তু সেবন (যেমন অ্যালকোহল বা অ্যাস্পিরিন-জাতীয় ওষুধ) সার্জারির অন্ততঃ ২৪ ঘন্টা আগে থেকে (অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী) সম্পূর্ণ বর্জন করুন।
- সার্জারির আগের রাতে/সন্ধ্যে থেকে কোনো খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করবেননা।
- অদূর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, সার্জারির পর আপনাকে সাহায্য করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে নিযুক্ত করুন। বাড়ীতে অথবা হাসপাতালে সর্বত্রই আপনার নিত্যপ্রয়োজনীয় ও নৈমিত্তিক কাজকর্মের জন্য আপনার সাহায্যের দরকার পড়বে। তাই সার্জারিতে যাবার পূর্বেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা বাঞ্ছনীয়।
ল্যামিনেক্টমি সার্জারির সময় সম্ভাব্য ঘটনাপরম্পরা
এই সার্জারির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যা মনে রাখতে হবে তা হল এর জন্য আপনি দীর্ঘক্ষণ অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাবে অচেতন থাকবেন। আপনার অ্যানেস্থেটোলজিস্ট আপনাকে সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন করার বদলে লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া বা শুধুমাত্র মেরুদন্ডটি সংজ্ঞাহীন করার কথা বলতে পারেন। মনে রাখবেন, এই পদ্ধতিতে কোনোরকম ব্যথা হয়না।
সম্পূর্ণ সার্জারির পদ্ধতিটি সহজভাবে বোঝানোর জন্য ধাপে ধাপে আলোচনা করা ।
প্রথম ধাপ: সবার প্রথমে নির্দিষ্ট অংশটি পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। এরপর সার্জেন ঘাড় ও পিঠের সংযোগস্থলে একটি ছোট অংশ কাটেন। এই কাটা অংশের মধ্য দিয়ে নরম কোষ ও পেশীগুলিকে দুপাশে সরিয়ে নিলে মেরুদন্ডটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
দ্বিতীয় ধাপ: এই ধাপে সার্জেন মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টিকারী অতিরিক্ত কোষ, হাড় বা হাড়ের বর্ধিত অংশ কেটে বাদ দেবেন। রোগের বর্তমান অবস্থা বিচার করে এই চাপ কমানোর জন্য সার্জেন মেরুদণ্ডের নির্দিষ্ট একটি বা একাধিক অংশও বাদ দিতে পারেন।
তৃতীয় ধাপ (বাধ্যতামূলক নয়): রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে সার্জেন গলন বা ফিউশনের মাধ্যমে ল্যামিনেক্টমি করার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে একটি কৃত্রিম অংশ শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়, যা কোমরের নিচের অংশের হাড়গুলিকে অবলম্বন দেয় ও ভারবহন করতে সহায়তা করে। যদি ফিউশনের প্রয়োজন না থাকে, তবে সার্জেন সরাসরি চতুর্থ ধাপ অনুসরণ করেন।
চতুর্থ ধাপ: অতিরিক্ত হাড় বা হাড়ের অংশগুলি বাদ দেওয়া হয় গেলে সার্জেন সরিয়ে রাখা কোষ, পেশী ও ত্বকের অংশগুলিকে পুনরায় নিজস্থানে স্থাপন করেন এবং কাটা স্থানটি সেলাই করে দেন। সবশেষে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলে সার্জারি সম্পন্ন হয়।
সম্ভাব্য জটিলতা
খুব বিরল হলেও ল্যামিনেক্টমি অপারেশনের পর কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:
- রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া
- অপারেশনের ফলে সংক্রমণ
- সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ক্ষরণ
- মেরুদণ্ডের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
এই সার্জারির পর রোগীকে খুব সাবধানতার সাথে পর্যেবেক্ষন করা হয়। কোনো জটিলতা দেখা দিলেই চিকিৎসক বা সার্জেন তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সাধারণতঃ এই সার্জারির পর যে জটিলতাগুলি দেখা দেয় সেগুলি হল:
- অপারেশনের পর কোনো বিশেষ ওষুধ থেকে অ্যালার্জি
- অপারেশনের পর পুরনো ব্যথা ফিরে আসা
- শ্বাসকষ্ট
- পায়ে ব্যথার অনুভূতি
- রক্তক্ষরণ
- জ্বর
- প্রস্রাবে অসুবিধা
- বুকে ব্যথা
যদি আপনার এর মধ্যে কোনো অসুবিধা দেখা দেয়, তবে দ্রুত ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ ল্যামিনেক্টমি সার্জেনের পরামর্শ নিন।
অপারেশনের পর পালনীয় ব্যবস্থা ও সাবধানতা
অপারেশনের পর হাসপাতালে থাকা অবস্থায় এবং ছাড়া পাওয়ার পরও আপনার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অন্ততপক্ষে প্রথম দু-তিনদিন আপনার নড়াচড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চলেনর ওপর কড়া নজর রাখবেন (ফিউশনের মাধ্যমে ল্যামিনেক্টমি অপারেশনের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়)।
সাধারণ অপারেশনের পর আপনাকে যে বিষয়গুলি অবশ্যই পালন করতে হবে সেগুলি হল:
- কোনো ভারী কাজ যেমন ওজন তোলা, শরীরচর্চা ইত্যাদি করবেননা
- অপারেশনের পর প্রথম কিছুদিন হালকা চলাফেরা করবেন। ধীরে হাঁটাচলা করতেই পারেন, কিন্তু পরিশ্রমসাধ্য কাজ যেমন দ্রুত হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা, দৌড়োনো ইত্যাদি একেবারেই করবেননা
- হাঁটাচলা ইত্যাদি শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ হঠাৎ একবারে বাড়িয়ে দেবেন না। প্রথমে অল্প পরিমাণে অভ্যাস করুন এবং ধীরে ধীরে তার মাত্রা বাড়ান
- অপারেশনের ক্ষতস্থানটির সবিশেষ যত্ন নিন। আপনার চিকিৎসা সহায়ককে দিয়ে স্থানটি এনিয়মিত পরিষ্কার করান এবং ড্রেসিং করুন। এতে সংক্রমনের সম্ভাবনা কম থাকে
- নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে সম্পর্ক রাখুন এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা করান