ক্রোন রোগ
ডায়ারিয়া থেকে শুরু করে পেটব্যথা এমনকি হঠাৎ অনেক ওজন কমে যাওয়া, অন্ত্রের সমস্যা মাঝেমাঝে শারীরিক দিক থেকে আমাদের আশাহত করে তোলে। ক্রোনও তেমনিই একটি রোগ। এই রোগটির সঙ্গে বিশেষ কিছু লক্ষণ হালকা থেকে মাঝারি পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়।তবে সৌভাগ্যবশত, রোগটি খানিকটা জটিল প্রকৃতির হলেও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে নির্মূল করে তোলা সম্ভব।
ক্রোন রোগটি আসলে কী?
ক্রোন অন্ত্রজনিত সংক্রামক রোগ(IBD)।রোগটি পরিপাকনালিতে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। এই কারণবশত আপনি হয়ত ওজন কমে যাওয়া,ডায়ারিয়া,পেটযন্ত্রনা,অপুষ্টি সংক্রান্ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ব্যাক্তিবিশেষে -লক্ষণগুলো আলাদাও হতে পারে। ক্রোন রোগটি মূলত সরাসরি অন্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্তের সঙ্গে জড়িত কিন্তু এটা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অংশের এর সঙ্গেও খানিকটা সংযোজিত, যেটি কোনো নতুন আলোচনার বিষয় নয় কারণ পরিপাকনালী ও অন্ত্র পরস্পর সম্পর্কিত।
আগেই উল্লেখ করেছি যে,রোগটির বেশিরভাগ প্রভাব পড়ে পরিপাকনালিতে,তবে অন্ত্রের কোশগুলির প্রতিটি স্তরের মধ্যেও এটি প্রসারিত হয় ।এই সেই সময় যখন রোগটি প্রতিরোধ করার জন্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।রোগটি যন্ত্রণাদায়ক থেকে শরীরকে নিস্তেজও করে তোলে,এর ফলাফল অনেক সময় প্রাণঘাতীও হয় ব্যাক্তিবিশেষে।তবে ভাল দিকটি হল,যে এর চিকিৎসা রয়েছে ও রোগটি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব।তবুও আরো ভাল ফলাফল পেতে হলে নিত্যদিনের অনিয়মিত জীবনশৈলীকে কিছুটা বদলাতে হবে এবং সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকাকে সঙ্গী করতে হবে।
ক্রোনরোগের লক্ষণসমূহ
নীচে তালিকায় কিছু প্রাথমিক লক্ষণগুলি উল্লেখ করা হল-
- পেটের মাংসপেশীতে আচমকা খিঁচুনি ও ব্যথা
- ওজন কমে যাওয়াা
- মলের সঙ্গে রক্ত
- প্রায়ই অন্ত্রের অস্বাভিক নড়াচড়া
- ডায়ারিয়া
- মুখে ব্যথা
- পায়ু অংশে নিদারুন ব্যথা
- খিদে কমে যাওয়া
- জ্বর
- অলসতা,অবসন্নতা,অবসাদ
এবার কিছু,গৌণ লক্ষণগুলো চিনে নেওয়া যাক,
একেবারে সাধারন লক্ষণ ছাড়াও,যেগুলি রোগটিকে চিনতে সাহায্য করে তা হল-
- হাত-পা-এর গাঁটে,চোখে ও ত্বকে প্রদাহ
- যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধি ব্যাহত
- পিত্তনালিতে ও যকৃতে প্রদাহ
তবে উপসর্গগুলোর কথা ভেবে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই,আপনি উল্লিখিত সমস্ত লক্ষণগুলোর শীকার নাও হতে পারেন কিন্তু এগুলির একটির সামান্যতম অনুভব করলেও তা ফেলে রাখবেন না,ডাক্তারের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করুন ও পরামর্শ নিন।
ক্রোনরোগের কারণসমূহ
“ক্রোণ রোগের মূল কারণটা কী”প্রশ্নের সবচেয়ে সঠিক এবং জ্ঞাত উত্তর এইটিই হবে যে রোগটি:
- দেহের অনাক্রমতা তন্ত্র
- আশেপাশের পরিবেশ
- জিনজনিত-কারণগুলির সঙ্গে অতপ্রতভাবে জড়িত।
যদিও সাময়িক কিছু স্টাডি থেকে জানা গিয়েছে যে আরও কিছু অভ্যাস বা অবস্থা ক্রোন রোগ -এর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।সেগুলি হল-
- কোনো ব্যক্তি ধূমপান করেন কিনা!
- রোগটি কতদিন ব্যক্তিটির দেহে বাসা বেঁধে ছিল!
- ব্যক্তির বয়স
- মলদ্বার/পায়ুর আশঙ্কাজনক অবস্থা ইত্যাদি।
রোগটি দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজেই ব্যাক্টেরিয়া,ছত্রাক,পরোজীবি,ভাইরাস সংক্রামিত অন্ত্রজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকেন।এই সমস্যাগুলি ক্রোনরোগের কারণগুলোকে উত্তরোত্তর বাড়িয়ে তোলে। ইষ্ট নামক ছএাক আক্রান্ত অন্ত্রনালি ও ফুসফুস ক্রোন রোগের দ্বারা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও সর্ব্বোচ পর্যায়ে উপনীত হয়।
ক্রোনরোগের সহিত আসন্ন জটিলতাসমূহ
ক্রোনরোগ নিম্নলিখিত জটিলতাগুলি সৃষ্টি করে,
- আলসার
- ঔষধিক
- আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা
- ফিস্চুলা
- অপুষ্টি
- কোলন ক্যানসার
- পায়ুর সমস্যা
ক্রোনরোগ নির্ণয় পরীক্ষাসমূহ
রোগটি পরীক্ষা করতে যখন ডাক্তারের নিকট যাবেন,আরও বেশ কিছু সাধারন টেস্ট করতে হবে সুতরাং তৈরী থাকুন। এই পরীক্ষাগুলি করে ডাক্তাররা এটাই নিশ্চিত করেন, যে আপনি অন্য কোনো রোগে ভুগছেন নাকি ক্রোনরোগে আক্রান্ত। এমন কোনো নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই যা দিয়ে ক্রোনরোগকে চিনে নেওয়া যায়।
কিছু পরীক্ষা যা ডাক্তাররা চিকিৎসার আগে করে নেন,তা হল-
- রক্ত পরীক্ষা
- MRI
- Computerised tomography (CT)
- পায়ু থেকে রক্ত পড়ার কারণ জানতে কোলনোস্কোপি
- ক্ষুদ্রান্ত-এর অবস্থা জানার জন্যে এন্ডোস্কোপি
- ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি
ক্রোনরোগের চিকিৎসা
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর আসে রোগটিকে গোড়া থেকে নির্মূল করার পালা।
আগেই বলেছি কোনো একটি চিকিৎসা দ্বারা রোগটি সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়।তাই ডাক্তাররা বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা রোগটি বিনাশ করেন।
এমন কিছু পদ্ধতি হল-
- কর্টিকোস্টেরয়েড ও আ্যামিনোসেলিসাইলেট জাতীয় সংক্রমন প্রতিরোধী ড্রাগ ব্যবহার করা।
- অনাক্রমতা নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করা।
- আ্যান্টিবায়োটিক
- ডায়ারিয়া প্রতিরোধী ওষুধ
- যন্ত্রণা নির্মুলকারক/Pain killer ব্যবহার করা
- আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ
- ভিটামিন-B-12গ্রহণ
- ভিটামিনন-D ওক্যালসিয়াম বড়ি নেওয়া
- দেহের পুষ্টি পরীক্ষা
- সার্জারি(কিছু কিছু ক্ষেত্রে)
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী
ক্রোন রোগটিকে দূরে রাখতে জীবনশৈলী ও খাদ্যতালিকায় কী কী পরিবর্তন করা উচিত?
রোগমুক্ত সুস্থ জীবন লাভ করার জন্যে কিছু সাধারন পরিবর্তন আমাদের মানিয়ে নিয়ে চলতেই হবে,যথা-
- দুগ্ধজাত প্রোডাক্ট কম খেতে হবে।
- কম লিপিড/ফ্যাট খাদ্যগ্রহণ।
- কম ফাইবার জাতীয় আহার গ্রহণ।
- ঝাল,ক্যাফিন ও মাদক দ্রব্য বর্জন করা।
- কম কিন্তু বারেবারে প্রতি 4ঘন্টা অন্তর অন্তর কিছু খাওয়া।
- পরিমাণমত জলপাণ করা।
- অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা থেকে বিরত থাকা।
কী কী একই ধরণের আরও অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে?
- পুষ্টি বৃদ্ধিকারক ও ভেষজ ওষুধ গ্রহন।
- প্রোবায়োটিকক ও প্রিবায়োটিক ব্যবহার।
- কডলিভার ওয়েল জাতীয় ফিস ওয়েল নেওয়া।
- আকুপাঙ্কচার(একধরণের হাতব্যায়াম, যাতে স্নায়ু সতেজ করা হয়।)ইত্যাদি ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ক্রোন রোগ কি বয়সের সাথে সাথে বাড়তে থাকে?
ক্রোন রোগ কী বংশগত?
ক্রোনরোগ কী ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে?
অনেক তত্ত্ব থেকে জানা যায় যে,পরিলক্ষিত লক্ষণগুলোকে সারানোর জন্যে সঠিক পরিচর্যা না করলে “Colorectal cancer”দেখা দিতে পারে।