মাল্টিপল মায়োলোমা কী?
মাল্টিপল মায়োলোমা হল একধরণের ক্যান্সার। এটি এমন একটি রোগ, যাতে শরীরের শ্বেত রক্তকণিকা এবং প্লাজমা কোষগুলি অস্বাভাবিক হারে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। মানবদেহের এই প্লাজমা কোষগুলি সাধারণতঃ অ্যান্টিবডি তৈরি করার মাধ্যমে শরীরকে রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এই অ্যান্টিবডিগুলি ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামেও পরিচিত। যদি মাল্টিপল মায়ালোমা নামক রোগ দেখা দেয়, তাহলে শরীরের প্লাজমা কোষগুলি অস্বাভাবিক হারে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইমিউনোগ্লোবিউলিন তৈরী করতে থাকে। এবং এই অতিরিক্ত ইমিউনোগ্লোবিউলিন হাড়ে ও রক্তে জমা হতে থাকে, যা থেকে অর্গান ফেইলিওর অর্থাৎ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্ৰত্যঙ্গগুলি ক্রমশঃ অকেজো হয়ে পড়তে থাকে।
এছাড়াও, কিছু কিছু বিরল ক্ষেত্রে এই ইমিউনোগ্লোবিউলিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে রক্তে অবস্থিত স্বাভাবিক রক্তকণিকার চাইতে প্লাজমা সেলের সংখ্যা বেশি হয়ে যায়। এবং এই অতিরিক্ত কণা গুলি এমন এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা দেহের অন্যান্য কোষগুলিকে ক্রমশঃ অস্থি গলিয়ে ফেলতে বাধ্য করে। এর ফলে অস্থি কলায় একাধিক দুর্বল স্থানের সৃষ্টি হয়, যা লাইটিক লিশন (ক্ষত) নামে পরিচিত।
মাল্টিপল মায়োলোমার কারণ
- প্লাজমা কোষের বিভিন্ন অসুখ, যেমন মনোক্লোনাল গ্যামোপ্যাথি অফ আনডিটারমাইন্ড সিগনিফিকেন্স (MGUS) এবং সলিটারী প্লাজমাসাইটোমা
- পরিবারে কারোর মাল্টিপল মায়োলোমা রোগের পূর্ব ইতিহাস বিদ্যমান থাকা
- মাল্টিপল মায়োলোমা রোগের সম্ভাবনা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়
মাল্টিপল মায়োলোমা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
- হাড়ে ব্যথা অনুভব হওয়া, বিশেষতঃ মেরুদন্ড ও বুকের হাড়ে
- বমি ভাব বা গা গোলানো
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- ক্ষিদে কমে যাওয়া ও ওজন হ্রাস পাওয়া
- বিভ্রান্তি
- ক্লান্তি বা দুর্বলতা
- ঘন ঘন জীবাণু সংক্রমণ বা ইনফেকশন
- পা অসাড় হয়ে যাওয়া
- অত্যধিক তেষ্টা পাওয়া
মাল্টিপল মায়োলোমার রোগ নির্ধারণ প্রক্রিয়া
- কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC) নামক রক্তপরীক্ষা
- কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্য রক্তে ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন (BUN) এবং ক্রিয়াটিনিনের মাত্রা পরীক্ষা করা
- হাড়ের বায়োপসি—এই পদ্ধতিতে অস্থিমজ্জার কিছু অংশ নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে তাতে প্লাজমা কোষের সংখ্যা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
- সিটি স্ক্যান
- এম আর আই
- পি ই টি সিটি স্ক্যান
মাল্টিপল মায়োলোমার চিকিৎসা
মাল্টিপল মায়োলোমা রোগটি নানা পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি হল মূলতঃ একটি ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ বা চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা শরীরের অভ্যন্তরে অতি দ্রুতহারে বাড়তে থাকা ক্যান্সার সেল বা কোষগুলির বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে এবং তাদের নির্মূল করে। এই ওষুধ সাধারণতঃ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলা ক্যান্সার সেল বা কোষগুলিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
যদিও কেমোথেরাপির বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি রেডিয়েশন বা ক্যান্সারের অপারেশনের চাইতে আলাদা। কারণ, রেডিয়েশন থেরাপি বা অপারেশন ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলিকে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করে। অন্যদিকে, কেমোথেরাপির ওষুধ মেটাস্টেসিস পর্যায়ে থাকা অর্থাৎ দেহের অন্যান্য অংশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধংস করতে সক্ষম। (আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: কেমোথেরাপি)
সুনির্দিষ্ট ঔষধ প্রয়োগ বা টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি
টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপিও ক্যান্সারের একধরণের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা ক্যান্সারের সাধারণ ওষুধ গুলিই ব্যবহার করে। কিন্তু এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রথাগত কেমোথেরাপির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপিতে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলির নিৰ্দিষ্ট জিন, প্রোটিন বা কোষের পরিবেশ, যা ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, সেই অংশগুলিকে লক্ষ্য করে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়। সাধারণতঃ, টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপিকে কেমোথেরাপি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ক্যান্সার চিকিৎসার সাথে একত্রিত করে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয় । (আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি)
ইমিউনোথেরাপি
রেডিয়েশন থেরাপি
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট প্ৰক্রিয়াটি স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট নামেও পরিচিত। এই পদ্ধতিতে দেহের ক্ষতিগ্রস্ত বা রোগাক্রান্ত অস্থিমজ্জাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অস্থিমজ্জা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়।
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হল মাল্টিপল মায়ালোমা রোগের সর্বাধিক কার্যকরী এবং উৎকৃষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা। (আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট)